Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ী ফল উৎপাদন

বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ী ফল উৎপাদন
ড. মো. জামাল উদ্দিন
দেশে ফলের উৎপাদন উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে। কৃষির নব নব উদ্ভাবন, সরকারের বিভিন্ন কার্যকর পদক্ষেপ এবং মাননীয় কৃষিমন্ত্রী ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাক এমপি এর সঠিক নির্দেশনায় কৃষিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। মৌসুমি ফল উৎপাদনে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দেশের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। এটি দেশের জন্য অত্যন্ত গৌরবের! বর্তমানে মৌসুমি ফলের উৎপাদন প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ টন ছাড়িয়েছে। দেশীয় ফলের পাশাপাশি বিদেশ থেকে আমদানিনির্ভর ফলও দেশে চাষ হচ্ছে। তার মধ্যে রয়েছে মাল্টা, ড্রাগন ফল, কাজুবাদাম, কফি, বেরি, স্ট্রবেরি, রাম্বুটান, অ্যাভোকাডো, লংগান ও রকমেলন দেশজুড়ে কমবেশি চাষাবাদ হচ্ছে। এসব ফলই বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ী ফল হিসাবে বিবেচিত। এসব ফলের মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে সবুজ মাল্টা (বারি মাল্টা-১) ও  লাল রঙের ড্রাগন ফল ভোক্তাদের বেশ দৃষ্টি কেড়েছে। চাহিদাও বেশ। দামেও বিদেশ থেকে আমদানিকৃত ফলের  চেয়ে কম। স্বাদ ও মিষ্টতা বিদেশি ফলের চেয়ে কোন অংশে কম নহে। পরিপক্ব সবুজ মাল্টা অত্যন্ত সুস্বাদু, রসালো ও পুষ্টিগুণসম্পন্ন একটি ফল। ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ ফলগুলোর মধ্যে মাল্টা অন্যতম। শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সী মানুষের কাছে এটি সমান জনপ্রিয়। ড্রাগন ফলও পুষ্টিসমৃদ্ধ একটি ফল। এ ফলে যে রঙিন পিগমেন্টেশন থাকে তা দেহের পুষ্টির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এসব বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ী ফসলের চাষাবাদ করে কৃষক সফল হয়েছে। আজকের আলোচনা মাল্টা এবং ড্রাগন ফলকে নিয়ে চাষির  সফলতা।
মাল্টা ও ড্রাগন ফল আমদানিনির্ভর বিদেশি ফল হিসাবে পরিচিত ছিল এতদিন। কৃষির বৈপ্লবিক পরিবর্তনে ফল দুটো দেশেই বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন হচ্ছে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) এ দুটো ফলের উচ্চফলনশীল জাত উদ্ভাবন করেছে। বারি মাল্টা-১ ও বারি মাল্টা-২ এবং বারি ড্রাগন ফল-১ নামে নিয়মিত ফলনদানকারী জাতসমূহ অবমুক্ত হয়েছে বেশ আগেই। সে সাথে অন্যান্য বিদেশী ফলের জাত হিসাবে বারি স্ট্রবেরির তিনটি জাত, রাম্বুটান এর একটি, অ্যাভোকাডোর একটি জাত এবং লংগান এর দুটো উচ্চফলনশীল জাত উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছে।
বিশ্বের সর্বমোট উৎপাদিত লেবুজাতীয় ফলের মধ্যে দুই তৃতীয়াংশ হচ্ছে মাল্টা এবং আমদানিকৃত বিদেশি ফলের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মাল্টা ও ড্রাগন ফল। ফল দুটো আমদানিতে প্রতি বছর প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হচ্ছে। আমদানি ব্যয় বাড়লে রিজার্ভের উপর চাপ পড়ে। বর্তমান বৈশ্বিক সংকটে আমদানি ব্যয় কমাতে বিশ্বের অনেক দেশ বেশ তৎপর। জাতীয় দৈনিকের সূত্রে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ২০২০-২১ অর্থবছরে বিদেশি ফল আমদানি করতে হয়েছে ৮ লাখ ২৪১ মেট্রিক টন। মোট আমদানির ৭৭ শতাংশই হচ্ছে আপেল ও মাল্টা। মাল্টা খাওয়ার ক্ষেত্রে বিশ্বে ১৪তম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। দেশে খুচরা পর্যায়ে বছরে ফলের বাজারের আকার প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা বলে ধারণা করছে জাতীয় এক দৈনিক পত্রিকা। দেশে বছরের পাঁচ মাস, অর্থাৎ সেপ্টেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি চলে বিদেশি ফল। এ সময়ে দেশীয় ফলের সরবরাহ কম থাকে। উৎপাদন বাড়লে পর্যায়ক্রমে এসব ফলের  আমদানি নির্ভরতা কমবে বলে আশা করছে সংশ্লিষ্টজনেরা।
চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে মাল্টা ও ড্রাগন ফলের সম্ভাবনার কথা জানতে গিয়ে ফটিকছড়ি উপজেলার চৌকস কৃষি কর্মকর্তা হাসানুজ্জমান বলেন মাল্টা ও ড্রাগন ফল গাছের এক একটি ফল যেন এক একটি ডলার। মনে হয় গাছেই বৈদেশিক মুদ্রা ঝুলছে। এটি তার সঠিক উপলব্ধি। তিনি বলেন কৃষকের চাহিদার আলোকে তাদের প্রচেষ্টায় ফটিকছড়িতে অনেক মাল্টা ও ড্রাগন ফলের বাগান গড়ে তুলেছেন। কৃষকেরা লাভের মুখ দেখতে শুরু করেছেন। এমনই একজন মাল্টা চাষি ফটিকছড়ির ইসলামপুরের শাহ আলম মুন্সি। তিনি জানান, তিন বছর আগে ২ একর জমিতে ৫৫০টি বারি মাল্টা-১ এর গ্রাফট কলম রোপণ করেছিলেন। প্রথম বছরে মাল্টার সাথে আন্তঃফসল হিসেবে কলা, পেঁপে ও মরিচ চাষ করেছিলেন। সেখান থেকে বাড়তি আয়ও পেয়েছিলেন। তিন বছর বয়সী তাঁর প্রতিটি মাল্টা গাছ থেকে গড়ে ১৫-২০ কেজি মাল্টা সংগ্রহ করে বেশ লাভবান হয়েছেন। তাঁরমতে পরিপক্ব অবস্থায় মাল্টা সংগ্রহ করে বিক্রি করলে দাম ও চাহিদা বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে। সে সাথে দেশের মানুষ তাজা ও ভালো মানের মাল্টা খেতে পারবে বলে তিনি মনে করেন। গত ৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সম্মানিত মহাপরিচালক মোঃ বেনজীর আলম উক্ত বাগান পরিদর্শন করেন বলে জানান ফটিকছড়ি উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা।
রামগড়ের গ্রীন টাচ্ এগ্রো বাগানের স্বত্ববাধিকারী সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মাহমুদুল হাসান মাল্টা ও ড্রাগন ফলকে বৈদেশিক মুদ্রা ফল হিসাবে আখ্যায়িত করে বলেন টেকসইভাবে এ ফল দুটো টিকিয়ে রাখতে হলে রাজশাহীর আমের মতো সংগ্রহের সঠিক সময় বেঁধে দেয়া জরুরি এবং চাষিদের একটি সমন্বিত উদ্যোগ থাকা দরকার যাতে নির্দিষ্ট সময়ে ও নির্দিষ্ট দামে এ মাল্টা বিক্রি করা যায়। আইনজীবী মাহমুদুল হাসান এর বাগানে ৮৫০টি বারি মাল্টা-১ ও বারি মাল্টা ২ থেকে ২০২০ সালে প্রায় ৬.৫ লক্ষ টাকা আয় করেন। তার বাগানের বারি ড্রাগন ফল-১ স্থানীয়ভাবে প্রতিকেজি ২৫০-৩০০ টাকায় বিক্রি করতে পেরে বেশ সন্তুষ্ট।  হাফছড়ির সফল কৃষি উদ্যোক্তা মো: আতিয়ার রহমান ১০০০টি বারি মাল্টা-১ এর গাছ থেকে গত বছর ৮ টন বারি মাল্টা-১ সংগ্রহ করেছিলেন। পাইকারি এসব মাল্টা প্রতি কেজি ৮০-১০০ টাকায় বিক্রি করেন। তার মতে অনেক ডাক্তারও বিদেশি হলুদ মাল্টার পরিবর্তে দেশীয় এ সবুজ মাল্টা খেতে পরামর্শ দেন। তিনি জানান, সবুজ মাল্টার প্রচারণা বাড়ালে বিদেশি হলুদ মাল্টার চেয়ে বাজার চাহিদা বৃদ্ধি পাবে।
দেশে সবচেয়ে বেশি মাল্টা উৎপাদন হয় মাগুরা জেলায়। জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ সূত্রে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য মতে, ২০২০-২১ অর্থবছরে মাল্টা উৎপাদনে দ্বিতীয় শীর্ষ রাজশাহী জেলা। এখানে ৬৭৭ টন মাল্টা উৎপাদন হয়েছিল। এরপর ছিল টাঙ্গাইল (৪৫৬ টন), রাঙামাটি (৪০৮ টন), বান্দরবান (৩৩১ টন) ও যশোর (৩০২ টন), দিনাজপুরে ২৮৩ টন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ২৫৮ টন, খাগড়াছড়িতে ২৬৬ টন এবং পিরোজপুরে ২০৮ টন। তবে গত ২০২১-২২ অর্থবছরে মাল্টার উৎপাদন (ফসল-উত্তর ক্ষতি বাদে) ১০ হাজার টন ছাড়িয়েছে বলে প্রাথমিক তথ্যে উঠে এসেছে। প্রতি কেজি মাল্টার গড় দাম ৮০ টাকা হিসাবে ফলটির বাজার ৮০ কোটি টাকা। যা বর্তমান ডলারের বিনিময় মূল্য ১০০.০৯ টাকা ধরে হিসাব করলে এ পরিমাণ মাল্টা আমদানি করতে ডলার খরচ পড়বে ৭৯ লক্ষ ৯৫ হাজার ১৬১ ডলার!  উল্লেখ্য, এই সাইট্রাস জাতটি মাঠ পর্যায়ে গ্রহণের আগে বাংলাদেশ ২০০০ কোটি টাকা (২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) সাইট্রাস ফল আমদানি করেছিল, কিন্তু এখন এটির আমদানি ব্যয় ১৫০০ কোটি টাকা হ্রাস পেয়েছে অর্থাৎ প্রতি বছর ৫০০ কোটি টাকা (৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) সাশ্রয় হয়েছে বলে শীর্ষ এক ইংরেজি দৈনিকে সংবাদ প্রচার রয়েছে। এটি একটি একক সাইট্রাস ফলের জন্য আশ্চর্যজনক সাফল্য। অনুরূপভাবে দেশে গত ছয় বছরে ড্রাগন ফলের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৩১ গুণ। গত অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি উৎপাদন হয়েছে ঝিনাইদহ জেলায়। মোট ১৫১ হেক্টর জমিতে জেলাটিতে ৩ হাজার ৩৫৩ টন ড্রাগন ফল উৎপাদন হয়েছে, যা দেশের মোট উৎপাদনের প্রায় ৩৯ শতাংশ। এছাড়া যশোর জেলায় উৎপাদন হয়েছে ৫১ হেক্টর জমিতে ৯৬৫ টন। নাটোর জেলায় ৪০ হেক্টর জমিতে ৬৪০ টন, চট্টগ্রাম জেলায় ৫৫ হেক্টর জমিতে ৪১৮ টন ও নারায়ণগঞ্জ জেলায় ১৭ হেক্টর জমিতে ৩৯৫ টন ড্রাগন ফল উৎপাদন হয়েছে। এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলায় ৬৫ হেক্টর জমিতে ৩৪৮ টন ড্রাগন ফল উৎপাদন হয়েছে। সবমিলিয়ে ২০২০-২১ অর্থবছরে ৬৯৫ হেক্টর জমিতে ৮ হাজার ৬৫৯ টন ড্রাগন ফল উৎপাদন হয়। প্রতি কেজি ড্রাগন ফলের গড় দাম ২৮০ টাকা হিসাবে ফলটির বাজার ২৪২ কোটি ৪৫ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। যা বর্তমান ডলারের বিনিময় মূল্য ১০০.০৯ টাকা ধরে হিসাব করলে এ পরিমাণ ড্রাগন ফল আমদানি করতে ডলার খরচ পড়বে ২ কোটি ৪২ লক্ষ ৩০ হাজার ৫৩৬ ডলার।  
দেশে বিদেশি ফলের উৎপাদনকে উৎসাহিত করতে হলে মৌসুমে আমদানিকৃত ফলের উপর শুল্ক আরোপ করার কথাও বলেন অনেক বিশেষজ্ঞ। এ প্রসংগে সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কারপ্রাপ্ত খাগড়াছড়ি জেলার মহালছড়ির সফল কৃষি উদ্যোক্তা হ্লাচিং মং চৌধুরী বলেন এ ফল দুটো চাষে কৃষকদের আগ্রহ টেকসই ভাবে ধরে রাখতে মাল্টার বেলায় আগস্টের মাঝামাঝি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এবং ড্রাগন ফলের ক্ষেত্রে মে থেকে ডিসেম্বর প্রথম সাপ্তাহ পর্যন্ত আমদানি বন্ধ রাখা দরকার। তবে এ সময়ে দেশের চাহিদার তুলনায় এসব ফলের দেশজ উৎপাদন কম হলে আমদানির বিকল্প থাকে না বলে আমদানিকারকদের অভিমত রয়েছে। হ্লাচিং মং চৌধুরী আরো জানান চলতি বছর ৭ হাজার মাল্টা গাছ থেকে ১৭-১৮ টন মাল্টা বিক্রি করেন। এসবের বেশির ভাগই বারি মাল্টা-১। তিনি পাইকারি দরে ঢাকার কাওরান বাজারে বেশির ভাগ মাল্টা বিক্রি করেন। বাগানে মাল্টা ছাড়াও ২-৩ জাতের প্রায় ৫০০টি ড্রাগন ফলের গাছ রয়েছে যা থেকে চলতি বছর সাড়ে তিন টন ড্রাগন ফল সংগ্রহ করেন পাহকারি দামে বিক্রি করে বেশ লাভবান হয়েছেন।
বারি মাল্টা-১ ও ড্রাগন ফলের সামগ্রিক উৎপাদন বাড়াতে এর উপর কৃষকদের বারির বিজ্ঞানী ও কৃষি কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে কার্যকর প্রশিক্ষণ প্রদান; বারি মাল্টা-১ এর পরিপক্বতার লক্ষণ ও সংগ্রহের উপযুক্ত সময়ের উপর বিভিন্ন মিডিয়াতে ব্যাপক প্রচারণা চালানো; উত্তম কৃষি চর্চা প্রয়োগ; ফল সংগ্রহোত্তর ব্যবস্থাপনাসহ ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তির জন্য সুষ্ট বাজার ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারলে অচিরেই এ দুটো ফল বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ী হিসাবে আবির্ভূত হবে। সে সাথে বারি উদ্ভাবিত ফলের জাত মাঠ পর্যায়ে দ্রুত বিস্তারে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করলে অচিরেই এসব ফলের আমদানি নির্ভরতা কমবে।

লেখক : প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্র, বারি, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম-৪৩৩০, মোবাইল : ০১৮১৫৪২৫৮৫৭  ইমইেল: jamaluddin1971@yahoo.com

 


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon